Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

৮৭৩ কোটি টাকা নিয়েছে মডার্ন স্টিলসহ ৯ কোম্পানি

৮৭৩ কোটি টাকা নিয়েছে মডার্ন স্টিলসহ ৯ কোম্পানি

বেআইনিভাবে টাকা হাতিয়ে নিলে আইনিভাবে উদ্ধার করা হবে -অর্থ উপদেষ্টা

মিজান চৌধুরী
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪,

শিল্পে বিনিয়োগের নামে ব্যাংক ঋণ তুলে সে টাকা দিয়ে ভিন্ন ঋণ সমন্বয় এবং অর্থের একাংশ সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবিধান ভেঙে চটগ্রামের মডার্ন স্টিল মিলস কোম্পানি সাড়ে চারশ কোটি টাকা বের করে নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে। পৃথক ঘটনায় গুদামে পাটের মজুত ৯০ শতাংশ ঘাটতির পরও মোটা অঙ্কের ঋণ তুলে দেওয়া হয়েছে গ্রাহকের হাতে। শেষ পর্যন্ত ফেরত না দেওয়া ঋণের পৌনে দুইশ কোটি টাকা আটকে যায়। নানা অপকৌশলে ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখা থেকে ঋণের নামে ৮৩৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সরকারের নিরীক্ষা কার্যালয় এসব অনিয়ম তুলে ধরে রিপোর্ট তৈরি করেছে। এসব ঋণ এখন খেলাপি হয়ে পড়ছে যা আগামীতে আদায়ও অনিশ্চিত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে আর্থিক খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধে। বিশেষ করে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাচার, ঋণের নামে খেলাপি এবং ঋণের অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অনিয়ম দূর করতে ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, নিরীক্ষার মাধ্যমে উঠে আসা ঋণ জালিয়াতির ঘটনাগুলো দেখা হবে। বেআইনিভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের ঋণ নিয়ে আটকে রাখলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেটি উদ্ধার করা হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে অন্যায় ও অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। উপদেষ্টা আরও বলেন, আর্থিক খাত সংস্কারের কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও এরিয়া আছে। সে কাজগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে শেষ করা হবে।

জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক খাত থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি। ঋণের নামে ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা বের করে সেটি আর ফেরত দেওয়া হতো না। যে কারণে ঋণখেলাপির অঙ্ক বেড়েই চলছিল। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৬ মাসে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ মাসে বেড়েছে প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকা।

সরকারের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে চটগ্রামের ‘মডার্ন স্টিল মিলের নেওয়া ঋণ প্রসঙ্গে বলা হয়, কোনো গ্রাহককে ঋণ দেওয়ার পরপরই ওই ঋণ গ্রাহকের আবেদনে সংশ্লিষ্ট খাতে বিনিয়োগ হয়েছে কিনা-সেটি মনিটরিং করে নিশ্চিত করার বিধান আছে ব্যাংকগুলোতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১০ সালের ১৩ নম্বর প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা আছে। কিন্তু মডার্ন স্টিল মিলের ক্ষেত্রে ঋণের অর্থ দিয়ে আরেকটি ঋণ সমন্বয় এবং অন্য হিসাবে স্থানান্তর হয়েছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিবিধান পরিপন্থি। এছাড়া সিসি ঋণ ২০ কোটি টাকা এবং প্লেস ঋণ ৩০ কোটি টাকা পুরোটাই তুলে নিয়েছে গ্রাহক। এরপর সেখানে আর কোনো ঋণের অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। পাশাপাশি মডার্ন স্টিল মিলসের কাছে চলতি মূলধন ঋণ (পুনর্গঠন) ২৯৬ কোটি টাকা, প্লেজ ঋণ বাবদ ৩৭ কোটি টাকা, প্রকল্পের (পুনর্গঠন) ঋণ ৫৭ কোটি টাকা ও পিএডি ঋণ ৪২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এছাড়া মডার্ন স্টিল মিলের নামের ঋণের অর্থ এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান রতনপুন স্টিল মিলের ব্যাংক হিসাবেও স্থানান্তর করা হয়েছিল। যদিও রতনপুন স্টিল মিল ৬০ কোটি টাকার এলটিআর দায়ে একটি খেলাপি প্রতিষ্ঠান ছিল।

একইভাবে দেখা গেছে গ্রাহকের গুদামে পাটের নির্ধারিত মজুতের তুলনায় ঘাটতি ৯০ শতাংশ থাকার পরও ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্লক ঋণ মঞ্জুর করা হয়। পরে এ গ্রাহক ঋণের নামে ১৭২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আর টাকা পরিশোধ করেনি। ঘটনাটি খুলনার দৌলতপুর করপোরেট শাখায় ঘটেছে। মেসার্স রেজা জুট ট্রেডিং এবং মেসার্স শরীফ জুট ট্রেডিং এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে মেসার্স রেজা জুট ট্রেডিং নিয়েছে ১০৫ কোটি টাকা এবং ৬৭ কোটি টাকা নিয়েছে মেসার্স শরীফ জুট ট্রেডিং। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, পাটের ব্যবসার অনুকূলে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে গুদামে নির্ধারিত মজুতের ঘাটতি থাকলে ব্লক ঋণ দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটি ঘটেছে। যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অপর এক ঋণের ঘটনায় একই কায়দায় গুদামে পাটের মজুতের ৭০ শতাংশ ঘাটতির পরও ঋণ দেওয়া হয় ৬৫ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে এই ঋণের টাকা হাতিয়ে নিলেও ফেরত দেয়নি মের্সাস সিরাজুল ইসলাম। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা হয়, গুদামে পাটের ঘাটতি থাকার পরও ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছিল। পাট বিক্রি করে সে অর্থ ঋণ পরিশোধের কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। এই ঋণ দেওয়ার সময় বন্ধকী হিসাবে তৃতীয় পক্ষীয় জামানত হিসাবে রেজাউল ইসলাম নামে একজনের ৭৩ শতাংশ জমি নেওয়া হয়। কিন্তু বন্ধকী সম্পত্তি ব্যাংকের অনুকূলে পাওয়ার অব অ্যার্টনি দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, সচল আছে ফরিদপুরের মেসার্স এএ রসায়ন শিল্প এবং প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক। কিন্তু ব্যাংকের ঋণের ৩৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সে পরিশোধ করছে না। এই মালিকের সহযোগী আরও একটি প্রতিষ্ঠান আছে মেসার্স আল আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি। সেটিও ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান। এই গ্রাহক ঋণখেলাপি হওয়ার পরও ব্যাংক থেকে ঋণ পুনঃতফশিলের সুবিধা প্রদান করেছে।

ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৪০ কোটি টাকা আরও ৬টি ঋণের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-ভূমি অতি মূল্যায়ন করে ঋণের নামে ১৪ কোটি টাকা নিয়েছে ঢাকার রমনা করপোরেট শাখা থেকে মেসার্স মা ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠান, এছাড়া ৪৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমএস স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ ও এসআরএফ এন্টারপ্রাইজ নামে প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ২১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ঢাকার কুলসুম ফিড নামে আরেক প্রতিষ্ঠান।

most related